প্রকাশিত: Thu, Dec 7, 2023 5:24 PM
আপডেট: Sat, Dec 6, 2025 6:17 PM

[১] গোবিন্দগঞ্জের বরেন্দ্রভূমিতে চাষ হচ্ছে পাহাড়ের সুমিষ্ট কমলা

শামীম রেজা ডাফরুল, গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা): [২] পাহাড়ী ফল কমলা এখন চাষ হচ্ছে গোবিন্দগঞ্জের সমতল ভুমির বরেন্দ্র অঞ্চলের লাল মাটি এলাকায় হালিম মন্ডল৯২৭) নামের বেকার এক যুবক পুকুর পাড়ের জমিতে কমলার বাগান করে সফলতা পেয়েছে। তার বাগানে সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে থোকায় থোকায় ঝুলছে নজরকাড়া ছোট ছোট হলুদ রঙের সুমিষ্ট ও রসালো কমলা। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ আসছে এই কমলা বাগান দেখতে এবং কমলা কিনতে।  [৩] বিদেশ যাওয়ার জন্য টাকা দিয়ে দালাল দ্বারা প্রতারিত হওয়ার পর বেকারত্বের হতাশা কাটিয়ে প্রবল ইচ্ছা আর কঠোর পরিশ্রম করে স্বাবলম্বি হওয়ার এক উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন হালিম মন্ডল। নিজস্ব পুকুর পাড়ের পতিত জমিতে কমলার বাগান করে কমলা বিক্রি করে প্রতি বৎসর ২ থেকে ৩ লক্ষাধিক টাকা আয় করে তিনি লাভবান হয়ে্েছন। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ তার কমলার বাগান দেখতে আসছে এবং তার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে প্রশংসা করছে। এখন সে বিদেশ যেতে না পারলেও নিজের চেষ্টায় নিজের ভাগ্য বদলিয়ে স্বাবলম্বি হয়েছে। এতে সে, তার পরিবার এবং এলাকাবাসীও খুশি। [৪] গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ সদর ২০ কি.মি. পশ্চিমে বরেন্দ্র ভূমির লাল মাটি এলাকা শাখাহার ইউনিয়নের বাল্যা  গ্রামের আব্দুস সামাদ মন্ডলের ছেলে হালিম মন্ডল (২৭) কমলার বাগান করেছেন। [৫] সরেজমিন দেখা যায়, বাগানের শতাধিক গাছে সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে থোকায় থোকায় ঝুলছে নজরকাড়া ছোট ছোট হলুদ রঙের অসংখ্য কমলা। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ আসছে এই কমলা বাগান দেখতে এবং কমলা কিনতে।  [৬] কমলার বাগান দেখতে আসা পল্লী উন্নয়ন ব্যংকের মাঠ কর্মী মাসুদ রানা বলেন-বাল্যা গ্রামের কমলার বাগান দেখে আমি অভিভূত হয়েছি। হালিম ভাই পুকুর পাড়ের পতিত জমিতে কমলার বাগান করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তার বাগানের কমলা সুস্বাদু ও রসালো। সমতল বরেন্দ্রভূমির লাল মাটিতে সুস্বাদু কমলার চাষ হতে পারে- হালিম ভাইয়ের কমলার বাগান তার একটি দৃষ্টান্ত।  আমি তাকে সাধূবাদ জানাই।  [৭] কোচাশহর থেকে বাগান দেখতে আসা সানু মিয়া বলেন, বিদেশি ফল কমলা আমাদের দেশের মাটিতে সুন্দর ভাবে চাষ করেছে হালিম ভাই। আমাদের দেশের মাটিতে কমলা নাকি সুস্বাদু ও ভাল হয়না। কিন্তু এ বাগানের কমলা অনেক মিষ্টি এবং রসালো। পুকুর পাড়ে বাগানটিও অনেক সুন্দর।  হালিম ভাই বিদেশ যেতে না পেরে বেকারত্বের হতাশা কাটিয়ে নিজ উদ্যোগে সুন্দর একটি কমলার বাগান করে লাভবান হয়েছেন। তাকে আমি ধন্যবাদ জানাই। সেইসাথে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাব দেশের বেকার যুবক এবং কৃষকদের এরকম ফল চাষে উদ্ভূদ করতে। যাতে তারা স্বাবলম্বি হতে পারে। [৮] কমলা চাষী হালিম মন্ডল বলেন, এসএসসি পাশ করার পর বিদেশ যাওয়ার জন্য এক দালালের কাছে টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়ে বেকার হয়ে হতাশায় ভুগতে থাকি। এরপর এক বন্ধুর পরামর্শে এবং ইউটিউব দেখে আমাদের নিজস্ব পুকুরের পাড়ের ৩ বিঘা পতিত জমিতে কমলার বাগান গড়ে তোলার সিন্ধান্ত নেই। [৯] পুকুরের এই পাড়ের জমি মাঝখানে উচু করে দুই পাশে ঢালূ করে পাহাড়ের মতো করে জমি তৈরি করি, যাতে জমিতে পানি আটকে না থাকে এবং প্রতিটি গাছ যেন পর্যাপ্ত সূর্যের আলো ও বাতাস পায়। ২০১৯ সালে চুয়াডাঙ্গা থেকে ২শ’ কমলার চারা কিনে এনে ৩ বিঘা জমিতে  চারা রোপনের পর দুই বৎসর অক্লান্ত পরিশ্রম আর গাছগুলি পরিচর্যা করে বড় করে তুলি। ২০২১ সালে অল্প কিছু গাছে কমলা ধরলেও তা বিক্রি করা হয়নি। ২০২২ সালে সব গাছে কমলা ধরে পরিপূর্ন হয়ে যায় এবং নবেম্বর - ডিসেম্বর মৌসুমে  প্রায় ২ লক্ষ টাকার কমলা বিক্রি করে লাভবান হই। এ বছর নবেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে কমলা বিক্রি শুরু করেছি। প্রতিদিনই পাইকারী এবং খুচরা বিক্রি করছি। প্রতি কেজি কমলা ১০০ টাকা ১১০ টাকা দরে বিক্রি করছি। এ পর্যন্ত  ১ লক্ষ টাকার মতো কমলা বিক্রি করেছি। আরও প্রায় ২ লক্ষ থেকে আড়াই লক্ষ টাকার মতো কমলা বিক্রি করা যাবে। এ বাগানে চায়না-৩, বারী -১, দার্জিলিং জাতের কমলা রয়েছে। 

তবে চায়না জাতের কমলাই বেশী। প্রতি বৎসর সার, কীটনাশক ও পরিচর্যায় লেবার খরচ বাবদ ৫০ হাজার টাকার বেশী খরচ হয়না। কমলা বিক্রি করে প্রতি মৌসুমে লাভ হয আড়াই থেকে ৩ লক্ষাধিক টাকা। বিদেশ যেতে না পারলেও  কমলার বাগান করে এখন আমি স্বাবলম্বি।  

[১০] গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার সৈয়দ রেজা ই মাহমুদ বলেন, গোবিন্দগঞ্জের বরেন্দ্র এলাকার লাল মাটিতে বিভিন্ন রকম ফলের চাষ হচ্ছে। হালিম মন্ডল কমলা চাষ করে যে সফলতা দেখিয়েছে তা একটি দৃষ্টান্ত এবং কৃষি বিভাগের সাফল্য। আগামীতে কৃষি বিভাগ তাকে আরও বিভিন্ন পরামর্শসহ প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করবে।